জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া : এক হাতে উন্নয়ন অন্য হাতে ধ্বংসলীলা। সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে দিনের পর দিন উন্নয়ন কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে, আর কিছু স্বার্থবান মানুষ নিজেদের হীন স্বার্থ হাছিলে তা ধ্বংসের মহাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। এভাবে দিনের পর দিন উন্নয়ন ধ্বংসের কাজ চলে আসলেও তা দেখেও যেন চোখে চশমা পড়ে আছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এভাবে কথাগুলো ক্ষোভের সাথে বললেন রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের যুবক মোহাম্মদ হাছান মুরাদ। এসময় তিনি আরও জানায়, দক্ষিন রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন সড়ক সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে উন্নয়ন কাজ করছে আর ভারি ট্রাক ও মাহিন্দ্র এসে সেই রাস্তা নষ্ট করে দিবে, আর সেটা সবাই চোখ বন্ধ করে দেখবে সেটাতো হয় না। তিনি অচিরেই এসব ট্রাক বন্ধে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।
সরেজমিনে রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে দেখা যায়, বিভিন্ন সড়কের উন্নয়ন কাজ মাহিন্দ্র গাড়ির ভারি চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে নাখাল অবস্থার সৃষ্টি করছে। এসব ভারি গাড়িতে সড়কের ইট উঠে গিয়ে সৃষ্টি করছে বড় বড় গর্তের। যা দিয়ে চলাচলে মারাত্বক ঝুঁকিতে পড়তে হয় যাত্রী সাধারণকে। স্বাথসন্বেষী মহলের ইট ভাটার ইট, বালি মহালের বালি কিংবা বন উজাড় করা কাঠ পরিবহনেই এসব মাহিন্দ্র ট্রাক ব্যবহার হচ্ছে। জনসাধারণের কোন কাজে না এলেও কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক অল্প সময়ে নষ্ট করতে এসব ট্রাক ঠিকই কাজে লাগে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এলাকাবাসী। তাই জনস্বার্থে হালকা সড়কে মাহিন্দ্র ট্রাকের মতো ভারী যানবাহন চলাচলে বিধি নিষেধ আরোপ সহ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বন্ধ করা জরুরী বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
সুত্রে জানা যায়, উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নে অন্যান্য ভারি ট্রাকের পাশাপাশি চলছে সাড়ে ৪ টন ওজনের প্রায় অর্ধশতাধিক মাহিন্দ্র ট্রাক। যেগুলো সরফভাটার বিভিন্ন ইটভাটার ইট, বালি মহালের বালি কিংবা বন উজাড় করা বিভিন্ন কাঠ বহন করে। আর এসব গাড়ি চলার সময় ইউনিয়নের কাচা সড়কগুলোর ইট, সুড়কি উঠে খানাকন্দকের সৃষ্টি করছে। সরফভাটা মিরেরখীল যাওয়ার ২টি সড়কের মধ্যে ১টি হলো হাজী আশরাফ আলী সড়ক। ২০১২ সালে দুই ধাপে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কে ব্রিক বসানো হয়েছিল। কিন্তু সড়ক উন্নয়নের মাত্র ৪ বছরের মাথায় সড়কটির এখন বেহাল অবস্থা। সড়কের অধিকাংশ স্থান জুড়ে ধেবে গিয়ে খাদের সৃষ্টি হয়েছে। এই সড়ক পথে এখন বাধ্য হযে গাড়িতে হেলেদুলে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে হাজার হাজার জনসাধারণ। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন মীরেরখীলের হাজার হাজার জনসাধারণ চলাচল করে। আর এই সড়কের জনসাধারণের জন্য একমাত্র পরিবহন সিএনজি চালিত অটোরিক্সা। কিন্তু জনসাধারণের পাশাপাশি এই সড়ক পথেই চলে মাহিন্দ্র ট্রাক ও বিভিন্ন ভারি যানবাহন। যেগুলো গুটি কয়েক স্বার্থন্বেশী মহলের ইটভাটার ইট, বালি ও কাঠ পরিবহন কাজে ব্যবহৃরিত হয়। আর এসব ট্রাকেই অল্প সময়ে নষ্ট হয়েছে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হাজী আশরাফ আলী সড়ক। সড়ক নষ্ট করে জনসাধরণের দুর্ভোগ সৃষ্টি কারী এই গাড়ির বিচরণ সরফভাটার সর্বত্র হলেও তা দেখার যেন কেউ নেই।
একই অবস্থা উপজেলার পোমরা, বেতাগী, পদুয়া, শিলক, ইসলামপুর, দক্ষিণ রাজানগর, চন্দ্রঘোনার বনগ্রাম, পারুয়া, কোদালাসহ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের বিভিন্ন ছোট বড় সড়কের। এসব এলাকার হালকা সড়কগুলোতে ভারি ট্রাক ও মাহিন্দ্র গাড়িতে নষ্ট করছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। সাথে সৃষ্টি করছে উপজেলার লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষের প্রাত্যহিক দুর্ভোগ।
সরফভাটার মীরের খীলের জসিম উদ্দিন জানায়, বাধাহীন ভাবে মাসের পর মাস নিরন্তন চলছে মাহিন্দ্র ট্রাক। এসব গাড়ির জন্য রাস্তাগুলো অনুপযোগী হলেও সড়ক ধ্বংস করতে এসব মাহিন্দ্র ঠিকই উপযোগী। তিনি প্রশ্ন তুলেন কেন এই মাহিন্দ্র ট্রাক, কারা এসব মাহিন্দ্র চলার সুযোগ করে দিচ্ছে, কাদের পকেটে যাচ্ছে এসব অবৈধ যানবাহনের টাকা। এদের মুখোশ উম্মোচন করা প্রয়োজন।
কথা হয় ঈদেল, ইউসুফ, তাজুল, এরশাদ নামে কয়েকজন মাহিন্দ্র ট্রাক ড্রাইভারের সাথে। তারা জানায়, প্রতিটি গাড়ি সাড়ে ৪ টন ওজনের। মাল বুজাই করার পর তা আরও বেশি ওজন প্রাপ্ত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইট, বালি ও কাঠ পরিবহনেই মাহিন্দ্র ব্যবহৃরিত হয় বলে তারা জানান।
এসব ভারি মাহিন্দ্র ট্রাক বন্ধের ঘোষণা দিযে সরফভাটা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী জানান, অচিরেই সড়ক ধ্বংসকারী এই মাহিন্দ্র ট্রাক বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এজন্য তিনি সকলের সহযোগীতা কামনা করেছেন।
মরিয়মনরগ ইউনিয়নের রাজনৈতিক সিরাজুল করিম সিকদার (ভিপি সিরাজ) জানান, মরিয়মনগর খাল পাড় থেকে রানীর হাট পর্যন্ত ডিসি সড়কটিতে প্রতিদিন অবাধে চলছে ইট, বালি, কাঠ বুঝাই ভারি ট্রাক। যা মজবুত সড়কটি দিনের পর দিন নষ্ট করে দিচ্ছে। তাই জনস্বার্থে এসব ট্রাক চলাচলে বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা জরুরী বলে তিনি মনে করেন।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, সড়ক নষ্ট করে জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে চলা সকল যানবাহনের বিরুদ্ধে অচিরেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।